
ফেসবুক জীবনে প্রেম
৪ঠা পৌষ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ
১৮ই ডিসেম্বর ২০১৬
৪ঠা পৌষ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ ॥ ১৮ই ডিসেম্বর ২০১৬
২০১০ শব্দ · ⏱ পড়তে আনুমানিক ১১ মিনিট লাগবে
n
n
n১
n-হাই!ক্যামন আছেন?
n-ভাল, আপনি?
n-আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন কিনা ভয়ে ছিলাম।
n-কেন?
n-বাবা আপনার যে ভাব! কারো সাথে কথাই বলেন না।
n-মানে? এটা মনে হল কেন?
n-আসলে আপনাদের আই মিন বুয়েটের ছেলেদের অনেক অহংকার, তাই না? সেদিন তো দেখলাম, চুপচাপ বসে আছেন, মনে হল কেউ নিজে গিয়ে কথা বললে তাকে আপনি কৃতার্থ করবেন।
n-আপনি ঠিক বলছেন না, হ্যা বেশিরভাগ ছেলেরাই একটু অহংকারী, অনেকে নিজের ইনস্টিটিউশনকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু সবাই এক রকম নয়। আমি আসলে ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে কাউকে তেমন চিনিনাতো, তাই কারো সাথে তেমন কথা বলিনি, এক রবি ছাড়া। আপনি শুরুতেই এভাবে আক্রমন করবেন,ভাবিনি।
n-আরে!আপনি সিরিয়াস হয়ে গেলেন, দ্যাখ তো জ্বালা!
n-সরি, দেখতে পাচ্ছি না 🙂
n-:-)আমি আসলে আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম, আপনি আসলে দেখছি রাগ করতেও জানেন না। আমি সেদিন বুঝেছিলাম আপনি খুব একটা মিশুক নন। গোবেচারা! তাই একা একা এক কোনায় বসেছিলেন। কিন্তু এখন দেখছি মুখে খই ফুটছে!
n-খাবেন?
n-কি?
n-খই?……এই নিন 😉
n-x(
n
nকয়েকদিন কেটে গেল। ফেসবুকে লগ-ইন করতেই চ্যাট বক্স জেগে উঠল।
n
n-কি খবর!
n-খারাপ। ফেসবুকে বসার সময় পাচ্ছি না।
n-কেন?
n-জীবনটা প্রেশার কুকার হয়ে গেছে।
n-বাহ! ভালতো, আমার খুব ভালই হল, চটপট খাবার পেয়ে যাবো।
n-মানে?
n-মানে, কিছু না।
n-ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয়ে যায় “ইটস মাই লাইফ…”ঐ গানটার মত অবস্থা। কোন রকম ফ্রেস হয়ে চোখ মুছতে মুছতে ক্লাসে ঢুকি। ক্লাস শেষে সেশনাল, প্রেজেন্টেশন, স্যারের ঝাড়ি। ধুর! আর ভাল লাগে না।
n-আহারে!
n-তোমরাই ভাল আছ।
n-আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…
n-:X
n-তবু দেখি আপনি আজ বেশ খই ভাজছেন!
n-আমি একবার যাদের সাথে পরিচিত হই তাদের জন্য প্রচুর খই ভাজি।
n-তাই নাকি? তবে আমার জন্য কিন্তু একদম ভাজেন না, সেই যে ভেজেছিলেন, আর আজ…:-(
n-আজ একটু বেশি ভেজে দেব, আচ্ছা?
n
nমেয়েটা এবার ঘড়ি দেখল।
n
n-হায় হায়…আমার টিউশনি..:-(
n-কি হল?
n-মিস হয়ে গেল আপনার খই ভাজা খেতে খেতে!
n-ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু মিস হতে পারে। বি প্রিপেয়ার্ড 🙂
n-তাহলে তো খই ভাজা খাওয়া এখনি বন্ধ করতে হবে।
n-:-(
n-আচ্ছা ঠিকাছে, ভাজুন যত খুশি আজ। বাট এরপরে মনে করিয়ে দিতে হবে ।
n-আমি কী আপনার রুটিন জানি যে মনে করিয়ে দেব?
n-ওক্কে, লিখুন………………
n-আচ্ছা বিকাল ৩ টার বদলে ৪ টায় নিলে হয়না টিউশনিটা?
n-কেন?
n-আপনার জন্য অনেক খই ভাজতে ইচ্ছা করছে, প্রতিদিন এই সময়
n-তাই?;-)আচ্ছা চেষ্টা করব।
n
nএবং, এইভাবে প্রতিদিন তাদের খই ভাজার পর্ব চলতেই লাগল…….চলতেই লাগল, ঠিক এই সময়ে।
n
n২
n
nএকবছর পরে…
n
n-আপনিতো স্টার হয়ে গিয়েছেন ম্যাডাম!
n-আজ আবার কী হল? কী সমস্যা তোমার? কয়েকদিন পরপর এতো রাগ কর কেন?
n-রাগ না, খবর জানাচ্ছি। আপনার ফেসবুক ওয়ালেতো দেখি কবিতা আর প্রেমের বন্যা বইছে?
n-মানে কী?
n-খুলে দেখেন, গারবেজ সাহেব আপনাকে দেবী বানিয়ে দিয়েছেন, আরেকজন তো আপনার পায়ের প্রেমে পড়ে পা কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারলেই যেন খুশি হয়।
n-গারবেজ!সে আবার কে?
n-গারবেজইতো। ব্যাটা জানে যে তোমার অ্যাফেয়ার আছে, তারপর ও তোমাকে প্রপোজ করে! ওহ তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের তো আবার কিছু বলা যাবে না,তাই না?
n-দ্যাখো, ফেসবুকে কে কী বলল, করল তাতে কী আসে যায় বল?
n-নো, ইটস ভেরি ইম্পর্টান্ট। ফেসবুককে অবস্যই গুরূত্ব দিতে হবে। তোমার আমার পরিচয় আগে থাকলেও আন্ডারস্টান্ডিংটাতো ফেসবুকেই হয়েছে। দ্যাখো আমার ফেসবুকে কোন পরিচিত ছাড়া আমি কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইনা, গ্রহণ ও করিনা, তোমাকেও বলেছি, বাট তুমি আমার কথা শোন না।এই সব ফালতু ঝামেলা…
n-ফালতু ঝামেলার কী দেখলে?
n-ওহ, তোমারতো ভালই লাগছে, তোমাকে প্রশংসা করে কবিতা লিখছে, লোকজন লাইক দিচ্ছে, তাও মন্দ না, কিন্তু মেজাজ খারাপ হয় তখন ই যখন জেনে শুনেও প্রপোজ করে…মামদোবাজী নাকি এটা?
n– আচ্ছা, তাতে তোমার কী জ্বালা, আমি তো রিফিউজ ই করছি, তাই না?
n-তাহলে ঐ ব্যাটা এখনো তোমার ফ্রেন্ড কেন? আর এখনো কবিতা লেখে কেন তোমাকে নিয়ে? পরকীয়া করার চান্স খুজতেছে নাকী?
n-ওহ স্টপ ইট।
n-আচ্ছা, স্টপ করলাম, কিন্তু ওকে দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়, এখন ঠান্ডা করে দাও।
n-ওকে, আর দেখবে না।
n-আর বল, পরিচিত ছাড়া কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে না, বল প্রমিজ…
n-ওকে বাবা প্রমিজ!
n
n৩
n
nআরো একবছর পরে…
n
nধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজের গোড়ায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। অধিরভাবে সে প্রতিটি রিক্সা- প্রাইভেট কারের যাওয়া আসা দেখছে, যেন পরখ করছে। বার বার মোবাইল ফোন দেখছে। উতকন্ঠায় তার মুখ টা কালো। ঠিক পাশেই পিছন ফিরে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে, কানে হেডফোন, মনে হচ্ছে সে খুব মন দিয়ে গান শুনছে।
n
nকিছুক্ষন পরে মেয়েটিকে সে দেখল। একবার চোখাচুখি হল। আর ২ মিনিট পরে সে বলল,
n-আপনি কী কাউকে খুজছেন?
n-হ্যা, আচ্ছা আপনি কি জানেন, আশেপাশে কোন ফ্লেক্সি লোডের দোকান আছে কিনা?
n– না নেই। আপনি চাইলে আমার ফোন থেকে কথা বলতে পারেন।
n-আসলে ভাইয়া, আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার ফোনের চার্জ শেষ। তাই ফোন দিতে পারছি না, আবার সেওতো আমাকে পাবে না, আমার একদম খেয়াল ছিল না যে চার্জ শেষ, তাকে তো জানাই ও নি, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
n-কোন সমস্যা নেই কথা বলেন।
n
nফোনটা হাতে নিতেই মেয়েটির মনে হল, আরে! ওর ফোন নাম্বারতো ফোনে সেভ করা, মুখস্ত নেই, এখন কি হবে?
nমনে মনে আমতা আমতা করতে করতে মেয়েটি ছেলেটির দিকে চাইল। সে তখন তার আরেকটী ফোনে কথা বলছে,
n“থাকবো আমি এখানে, তাতে তোমার কী?”
n
nতার পর চুপ,
n“আমি আজ এখানে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবো”,
n
nকিছুক্ষন চুপচাপ।
n” তুমি বাসায় এসেও কোন লাভ নেই। আমি এখানেই থাকবো।”
n
nতারপর সে ফোনটা আস্তে করে কেটে দিল। মুখ তুলে তাকাতেই দেখল মেয়েটি তার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।
n– কথা বলেছেন?
n– না।
n
nমেয়েটি দিশেহারা দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাল। তারপর বলল
n
n-আমার ফোন ওপেন হচ্ছে না। নাম্বার ও জানি না। একটা সেট হলে ভাল হয়, আপনার সেটটা একটু পাওয়া যাবে?
n-আচ্ছা সমস্যা নেই।নিন।
n
nছেলেটি তার সেট থেকে সিম খুলে মেয়েটিকে দিল। মেয়েটি সিম পরিবর্তন করে নাম্বার খুজতে লাগল,কিন্তু নাম্বার নেই…নেইতো নেই।তার মানে সেটে সেভ করা। ঊফ! কী যাতনা!!তার মানে এখন শুধু ফোন আসার অপেক্ষা করতে হবে!!! দু দিন ধরে মেয়েটির সংখনীল কারাগার নামের ফেসবুকের এক বন্ধু তাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে। দেখা করতে চাচ্ছে। তার একটা চাকরীর ও দরকার ঢাকায়, আগেরটা গেছে। কোন একটা ব্যাবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে। মেয়েটি তাকে উত্তরে জানিয়েছে সে রাত ৮ টায় অফিস থেকে বেড়িয়ে বাসায় যাবার পথে আধা ঘন্টার জন্য দেখা করবে। ধানমন্ডির মুক্তমঞ্চ নামের জায়গায় থাকবে। কিন্তু ছেলেটি মুক্তমঞ্চ চেনেনা। কারন সে থাকে চট্টগ্রামে। তবু সে চিনে চিনে আসতে পারবে বলে জানিয়েছে । মেয়েটি শুধু তার কথা রাখার জন্যই এসেছে।
n
n-হ্যালো, শোন কোথায় তুমি?
n-আমি অফিসে।
n-খুব বিজি?
n-না, তবে কাজটা শেষ করা দরকার, শেষ হলেই বের হব। কেন, কী হয়েছে, বল?
n-আমার একটা উপকার করতে হবে।
n-বল বাবা, সমস্যা নেই।
n-আমার ফেসবুকে লগ-ইন করতে হবে। আমার ফোনের চার্জ় শেষ। তাই ফোন বন্ধ। ১০ টা সেকেন্ডের জন্য ও ওপেন হচ্ছে না। আর ওর ফোন নাম্বার ও আমার মুখস্ত নেই। ওর নাম্বারটা আমার ফেসবুকের মেসেজ ইনবক্সে পাবে।
n-মানে কি, কার ফোন নাম্বার?
n-পরে সব বলব। লোকটার নাম সংখ নীল কারাগার
n-তোমার ফোন বন্ধ, তাহলে কার ফোন নাম্বার এটা? দোকানের?
n-বলছি তো পরে বলব।
n– আচ্ছা, একটু ধর। লেখো ………
n
nরাত ৮তা ২৩ মিনিট।
n
n-হ্যালো,আপনি কোথায়?
n-আমি এইমাত্র পৌছলাম মুক্তমঞ্চে
n-আমিতো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, দেখতে পাচ্ছেন আমাকে? রাস্তার ডানে…
n-না, আসলে আমি মুক্তমঞ্চের এই চায়ের দোকানের গেট দিয়ে ঢুকেছি
n-আহা, ওই পাশে তো অনেক ভীড়, আপনাকে তো খুজেই পাবো না, আপনি বরং এ পাশের গেটে চলে আসুন, ব্রিজের দিকে।
n-আচ্ছা…
n
nকিছুক্ষন পরে কোকড়া চুলের শ্যামলা একটি ছেলেকে দেখা গেল। মেয়েটি বড় একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।
n
n-অবশেষে আপনাকে দেখা গেল!
n-আমি খুব দুঃখিত, আসলে তেমন কিছু চিনি না…
n-ইটস ওকে…
n
nমেয়েটি সিম খুলে দিতে দিতে বলল “আজ এই ভাইয়া না থাকলে আপনার সাথে হয়তো দেখাই হত না। আপনাকে থ্যাঙ্কস দিতে চাই না, বড় উপকার করলেন। চলুন সবাই মিলে চা খাই।
n-ইটস ওকে, বিপদে তো মানুষ মানুষকে হেল্প করবেই, আপনারা যান।
n– আচ্ছা, আপনার মত ভাল মানুষ এর সাথে পরে আর কোন দিন কথা হবে না, এটা হয় না, আপনি ফেসবুকে আছেন না?
n-হ্যা।আমার নাম কৃষিবিদ…
n-আচ্ছা, আমি আপনাকে অ্যাকসেস করে নেব। আসি, ভাল থাকবেন।
n
nতারপর সংখনীল ও মেয়েটি মুক্তমঞ্চে বসল। অনেক কথার পরে এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আমাদের অফিস একজন খুব ভাল বাংলা কন্টেন্ট রাইটার খুজছে। আপনি কী বাংলা এবং ইংরেজী ভাল লিখতে পারেন, অভ্যাস আছে?
n-না , লেখালেখির অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছি। তবে আপনি বললে এমনি লিখবো, আপনাদের অফিসে নয়।
n
nএবার মেয়েটি চমকে তাকাল। সংখনীল বলে যেতে লাগল…
n-আসলে আমি ঠিক প্রথাগত চাকরি খুজছি না, অ্যাডভেঞ্চারাস চাকরি খুজছি, যেমন কিছুদিন আগে “র” এর অফিস থেকে আমাকে ফোন দিয়েছিল। “র” কী জানেন? জানেননাতো ? “র” হল পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা সংস্থা। ৫০০০০০ ডলার বেতন। শর্ত একটাই ওদের, কাউকে জানানো যাবে না, আর যেকোন সময় পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যাবার জন্য তৈরি থাকতে হবে।তাই আমি এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি।ভাবছি, আপনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব, কারন এই যখন-তখনের চাকরীতে খুব রিস্ক, তাই না? নিজের কথা না ভাবলেও বউ- বাচ্চার কথা তো ভাবতেই হবে।
n
nমেয়েটি উঠে দাড়াল। তার চোখে আগুন জ্বলছে। আরে! লোকটির মাথায় ক্যাড়া নাকি?কী ভেবেছে সে তাকে? আসতে রাজি করানোর জন্যই তাহলে এই চাকরীর কথা বলা?! আর দেখা করে সে এখন “র” এর আজগুবি গল্প শোনাচ্ছে।ব্যাটা তোর “র” এর মাথায় বাড়ি, সে রাগে কিছু না বলেই হন হন করে হাটা শুরু করল, সংখনীল দ্রুত মেয়েটির সংগ ধরল
n
n– আরে আরে…আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাকে একা রেখে?কী হল ভাই??
n-এভাবে মানুষের সহমর্মিতার সুযোগ নিয়ে কাউকে ধোকা দেয়া ঠিক না।
n– ওহ ! বুঝেছি। আমি খুব ই দুঃখিত। আসলে আমি যদি সত্যি কথা বলতাম, আপনি কী আমার সাথে দেখা করতেন বলুন?
n-কিন্তু আপনি যে উদ্দেশ্যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন তা কখনই সফল হবে না।
n-আরে ভাই, সফল হবার কোন দরকার নেই। আমি এসেছি ঢাকায় বেড়াতে, ভাবলাম আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি, ভাল লাগে, তাই আপনার সাথে একটু দেখা করি, একসাথে আড্ডা দেই কিছুক্ষন, দ্যাটস অল।
n
nসংখনীল হাসতে হাসতে বলেই যাচ্ছে
n– এখানে কোথায় ভাল চা বা কফি পাওয়া যায়, বলুন তো, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
n
n৪
n
nরাত ১২ টা ১০ মিনিট। ফেসবুকের চ্যাটবক্সটা টং শব্দ করে মাথা জাগাল।
n
n-হ্যা, কি হয়েছিল, বলতো? ছেলেটি কে?
n-ফেসবুক ফ্রেন্ড
n-বুঝলাম, তো?
n-আরে বলনা, দেখলেইতো মেসেজে, চাকরীর জন্য সে ইনিয়ে বিনিয়ে কত কথা বলল…(যা হয়েছে তার সবিস্তারিত বিবরণ)
n-হা হা হা…(অট্টহাসি) বলেছিলাম তোমাকে, অপরিচিত কাউকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ো না।
n– মর জ্বালা! আমি কী পাঠিয়েছি নাকি কাউকে? সাধারনত অ্যাকসেপ্ট করি।
n-বাপরে! মনে হচ্ছে তুমি বিশাল সেলিব্রিটি হয়ে গেছো!
n-মজা করনা, ওরকম দু-পাচটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সবার প্রতিদিন আসে
n– আর অমনি অচেনা অজানা লোকজনের রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে হবে!
n-দ্যাখো, আমি অ্যাকসেপ্ট করেই শুধু খান্ত না, সাথে সাথে তার ইনফো, ওয়াল হিস্ট্রি, ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করি। যদি খারাপ হয় কোন না কোনভাবে বোঝা যায়। এই ছেলেটার চিন্তা ধারা প্রগতিশীল, যথেষ্ঠ মিশুক সে। তাছাড়া আজকাল নেটোয়ার্কিং বাড়ানো ও একটা ফ্যাক্ট। তুমিতো জান, ক্যারিয়ারের জন্য ও ফেসবুক প্রোফাইল আজকাল ইম্পর্টান্ট।
n-সবই বুঝলাম। কিন্তু এর চেয়ে বাজে ঘটনাওতো ঘটতে পারতো!
n-না, কারন আমি সচেতন ছিলাম, তাই তাকে মুক্তমঞ্চের মত জায়গায় আসতে বলেছিলাম।
n-আর ও সচেতন থাকা ভাল, সাবধানের মার নেই
n-আচ্ছা বাবা, নেই
n-বাবা ডাকছ কেন?
n-কষ্টে, তোমরা ছেলেরা যে কত রংগই জানোরে বাবা…এ্যতদিন করেছো ফোনে…এখন ফেসবুকে
n-উহু ঊল্টো। মেয়েরা এ ক্ষেত্রে অ্যাকটেল, মানে এক ধাপ এগিয়ে। এ্যতদিন চাহিবার তালিকায় ছিল শুধুই বাড়ি/ তারপর আসিল গাড়ি/ মুঠোফোনের কান মলায়/দড়ি পড়েছি গলায়/ এখন আবার ফেসবুক /বেছে নেবো কোন মুখ…মেয়েরা এখন কনফিউসড…:-)
n-:X
n-;-P
n
nফেসবুক এভাবেই জীবনে বাক আনে কখনো, কখনো আনে ভাল লাগা, মন্দ লাগা। ফেসবুক ও এখন মানুষের জীবনের একটি অনুষংগ, যেমন হয়েছে আমার। বাস্তব জীবনে উপরের এই মেয়েটি তাই আমি ই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোন অনুষংগই খারাপ বা অপকারী নয়, এর ব্যাবহারের উপর নির্ভর করে এর উপকারীতা বা অপকারীতা। তাই ফেসবুক এর ক্ষেত্রেও এর ব্যবহারের উপর এর ভাল মন্দ প্রভাব নির্ভর করছে। দয়া করে এখানে কেউ কাউকে খুব ভাল করে না জেনে প্রতারিত হবেন না। আপনাদের ফেসবুক জীবন শুভময় হোক।
n
n১
n-হাই!ক্যামন আছেন?
n-ভাল, আপনি?
n-আপনি আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করবেন কিনা ভয়ে ছিলাম।
n-কেন?
n-বাবা আপনার যে ভাব! কারো সাথে কথাই বলেন না।
n-মানে? এটা মনে হল কেন?
n-আসলে আপনাদের আই মিন বুয়েটের ছেলেদের অনেক অহংকার, তাই না? সেদিন তো দেখলাম, চুপচাপ বসে আছেন, মনে হল কেউ নিজে গিয়ে কথা বললে তাকে আপনি কৃতার্থ করবেন।
n-আপনি ঠিক বলছেন না, হ্যা বেশিরভাগ ছেলেরাই একটু অহংকারী, অনেকে নিজের ইনস্টিটিউশনকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু সবাই এক রকম নয়। আমি আসলে ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে কাউকে তেমন চিনিনাতো, তাই কারো সাথে তেমন কথা বলিনি, এক রবি ছাড়া। আপনি শুরুতেই এভাবে আক্রমন করবেন,ভাবিনি।
n-আরে!আপনি সিরিয়াস হয়ে গেলেন, দ্যাখ তো জ্বালা!
n-সরি, দেখতে পাচ্ছি না 🙂
n-:-)আমি আসলে আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম, আপনি আসলে দেখছি রাগ করতেও জানেন না। আমি সেদিন বুঝেছিলাম আপনি খুব একটা মিশুক নন। গোবেচারা! তাই একা একা এক কোনায় বসেছিলেন। কিন্তু এখন দেখছি মুখে খই ফুটছে!
n-খাবেন?
n-কি?
n-খই?……এই নিন 😉
n-x(
n
nকয়েকদিন কেটে গেল। ফেসবুকে লগ-ইন করতেই চ্যাট বক্স জেগে উঠল।
n
n-কি খবর!
n-খারাপ। ফেসবুকে বসার সময় পাচ্ছি না।
n-কেন?
n-জীবনটা প্রেশার কুকার হয়ে গেছে।
n-বাহ! ভালতো, আমার খুব ভালই হল, চটপট খাবার পেয়ে যাবো।
n-মানে?
n-মানে, কিছু না।
n-ঘুম থেকে উঠেই শুরু হয়ে যায় “ইটস মাই লাইফ…”ঐ গানটার মত অবস্থা। কোন রকম ফ্রেস হয়ে চোখ মুছতে মুছতে ক্লাসে ঢুকি। ক্লাস শেষে সেশনাল, প্রেজেন্টেশন, স্যারের ঝাড়ি। ধুর! আর ভাল লাগে না।
n-আহারে!
n-তোমরাই ভাল আছ।
n-আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে…
n-:X
n-তবু দেখি আপনি আজ বেশ খই ভাজছেন!
n-আমি একবার যাদের সাথে পরিচিত হই তাদের জন্য প্রচুর খই ভাজি।
n-তাই নাকি? তবে আমার জন্য কিন্তু একদম ভাজেন না, সেই যে ভেজেছিলেন, আর আজ…:-(
n-আজ একটু বেশি ভেজে দেব, আচ্ছা?
n
nমেয়েটা এবার ঘড়ি দেখল।
n
n-হায় হায়…আমার টিউশনি..:-(
n-কি হল?
n-মিস হয়ে গেল আপনার খই ভাজা খেতে খেতে!
n-ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু মিস হতে পারে। বি প্রিপেয়ার্ড 🙂
n-তাহলে তো খই ভাজা খাওয়া এখনি বন্ধ করতে হবে।
n-:-(
n-আচ্ছা ঠিকাছে, ভাজুন যত খুশি আজ। বাট এরপরে মনে করিয়ে দিতে হবে ।
n-আমি কী আপনার রুটিন জানি যে মনে করিয়ে দেব?
n-ওক্কে, লিখুন………………
n-আচ্ছা বিকাল ৩ টার বদলে ৪ টায় নিলে হয়না টিউশনিটা?
n-কেন?
n-আপনার জন্য অনেক খই ভাজতে ইচ্ছা করছে, প্রতিদিন এই সময়
n-তাই?;-)আচ্ছা চেষ্টা করব।
n
nএবং, এইভাবে প্রতিদিন তাদের খই ভাজার পর্ব চলতেই লাগল…….চলতেই লাগল, ঠিক এই সময়ে।
n
n২
n
nএকবছর পরে…
n
n-আপনিতো স্টার হয়ে গিয়েছেন ম্যাডাম!
n-আজ আবার কী হল? কী সমস্যা তোমার? কয়েকদিন পরপর এতো রাগ কর কেন?
n-রাগ না, খবর জানাচ্ছি। আপনার ফেসবুক ওয়ালেতো দেখি কবিতা আর প্রেমের বন্যা বইছে?
n-মানে কী?
n-খুলে দেখেন, গারবেজ সাহেব আপনাকে দেবী বানিয়ে দিয়েছেন, আরেকজন তো আপনার পায়ের প্রেমে পড়ে পা কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারলেই যেন খুশি হয়।
n-গারবেজ!সে আবার কে?
n-গারবেজইতো। ব্যাটা জানে যে তোমার অ্যাফেয়ার আছে, তারপর ও তোমাকে প্রপোজ করে! ওহ তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ডদের তো আবার কিছু বলা যাবে না,তাই না?
n-দ্যাখো, ফেসবুকে কে কী বলল, করল তাতে কী আসে যায় বল?
n-নো, ইটস ভেরি ইম্পর্টান্ট। ফেসবুককে অবস্যই গুরূত্ব দিতে হবে। তোমার আমার পরিচয় আগে থাকলেও আন্ডারস্টান্ডিংটাতো ফেসবুকেই হয়েছে। দ্যাখো আমার ফেসবুকে কোন পরিচিত ছাড়া আমি কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইনা, গ্রহণ ও করিনা, তোমাকেও বলেছি, বাট তুমি আমার কথা শোন না।এই সব ফালতু ঝামেলা…
n-ফালতু ঝামেলার কী দেখলে?
n-ওহ, তোমারতো ভালই লাগছে, তোমাকে প্রশংসা করে কবিতা লিখছে, লোকজন লাইক দিচ্ছে, তাও মন্দ না, কিন্তু মেজাজ খারাপ হয় তখন ই যখন জেনে শুনেও প্রপোজ করে…মামদোবাজী নাকি এটা?
n– আচ্ছা, তাতে তোমার কী জ্বালা, আমি তো রিফিউজ ই করছি, তাই না?
n-তাহলে ঐ ব্যাটা এখনো তোমার ফ্রেন্ড কেন? আর এখনো কবিতা লেখে কেন তোমাকে নিয়ে? পরকীয়া করার চান্স খুজতেছে নাকী?
n-ওহ স্টপ ইট।
n-আচ্ছা, স্টপ করলাম, কিন্তু ওকে দেখলেই আমার মাথা গরম হয়ে যায়, এখন ঠান্ডা করে দাও।
n-ওকে, আর দেখবে না।
n-আর বল, পরিচিত ছাড়া কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে না, বল প্রমিজ…
n-ওকে বাবা প্রমিজ!
n
n৩
n
nআরো একবছর পরে…
n
nধানমন্ডি ৮ নাম্বার ব্রিজের গোড়ায় ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। অধিরভাবে সে প্রতিটি রিক্সা- প্রাইভেট কারের যাওয়া আসা দেখছে, যেন পরখ করছে। বার বার মোবাইল ফোন দেখছে। উতকন্ঠায় তার মুখ টা কালো। ঠিক পাশেই পিছন ফিরে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছেলে, কানে হেডফোন, মনে হচ্ছে সে খুব মন দিয়ে গান শুনছে।
n
nকিছুক্ষন পরে মেয়েটিকে সে দেখল। একবার চোখাচুখি হল। আর ২ মিনিট পরে সে বলল,
n-আপনি কী কাউকে খুজছেন?
n-হ্যা, আচ্ছা আপনি কি জানেন, আশেপাশে কোন ফ্লেক্সি লোডের দোকান আছে কিনা?
n– না নেই। আপনি চাইলে আমার ফোন থেকে কথা বলতে পারেন।
n-আসলে ভাইয়া, আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু আমার ফোনের চার্জ শেষ। তাই ফোন দিতে পারছি না, আবার সেওতো আমাকে পাবে না, আমার একদম খেয়াল ছিল না যে চার্জ শেষ, তাকে তো জানাই ও নি, কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
n-কোন সমস্যা নেই কথা বলেন।
n
nফোনটা হাতে নিতেই মেয়েটির মনে হল, আরে! ওর ফোন নাম্বারতো ফোনে সেভ করা, মুখস্ত নেই, এখন কি হবে?
nমনে মনে আমতা আমতা করতে করতে মেয়েটি ছেলেটির দিকে চাইল। সে তখন তার আরেকটী ফোনে কথা বলছে,
n“থাকবো আমি এখানে, তাতে তোমার কী?”
n
nতার পর চুপ,
n“আমি আজ এখানে সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকবো”,
n
nকিছুক্ষন চুপচাপ।
n” তুমি বাসায় এসেও কোন লাভ নেই। আমি এখানেই থাকবো।”
n
nতারপর সে ফোনটা আস্তে করে কেটে দিল। মুখ তুলে তাকাতেই দেখল মেয়েটি তার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।
n– কথা বলেছেন?
n– না।
n
nমেয়েটি দিশেহারা দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকাল। তারপর বলল
n
n-আমার ফোন ওপেন হচ্ছে না। নাম্বার ও জানি না। একটা সেট হলে ভাল হয়, আপনার সেটটা একটু পাওয়া যাবে?
n-আচ্ছা সমস্যা নেই।নিন।
n
nছেলেটি তার সেট থেকে সিম খুলে মেয়েটিকে দিল। মেয়েটি সিম পরিবর্তন করে নাম্বার খুজতে লাগল,কিন্তু নাম্বার নেই…নেইতো নেই।তার মানে সেটে সেভ করা। ঊফ! কী যাতনা!!তার মানে এখন শুধু ফোন আসার অপেক্ষা করতে হবে!!! দু দিন ধরে মেয়েটির সংখনীল কারাগার নামের ফেসবুকের এক বন্ধু তাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠিয়ে যাচ্ছে। দেখা করতে চাচ্ছে। তার একটা চাকরীর ও দরকার ঢাকায়, আগেরটা গেছে। কোন একটা ব্যাবস্থা করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছে। মেয়েটি তাকে উত্তরে জানিয়েছে সে রাত ৮ টায় অফিস থেকে বেড়িয়ে বাসায় যাবার পথে আধা ঘন্টার জন্য দেখা করবে। ধানমন্ডির মুক্তমঞ্চ নামের জায়গায় থাকবে। কিন্তু ছেলেটি মুক্তমঞ্চ চেনেনা। কারন সে থাকে চট্টগ্রামে। তবু সে চিনে চিনে আসতে পারবে বলে জানিয়েছে । মেয়েটি শুধু তার কথা রাখার জন্যই এসেছে।
n
n-হ্যালো, শোন কোথায় তুমি?
n-আমি অফিসে।
n-খুব বিজি?
n-না, তবে কাজটা শেষ করা দরকার, শেষ হলেই বের হব। কেন, কী হয়েছে, বল?
n-আমার একটা উপকার করতে হবে।
n-বল বাবা, সমস্যা নেই।
n-আমার ফেসবুকে লগ-ইন করতে হবে। আমার ফোনের চার্জ় শেষ। তাই ফোন বন্ধ। ১০ টা সেকেন্ডের জন্য ও ওপেন হচ্ছে না। আর ওর ফোন নাম্বার ও আমার মুখস্ত নেই। ওর নাম্বারটা আমার ফেসবুকের মেসেজ ইনবক্সে পাবে।
n-মানে কি, কার ফোন নাম্বার?
n-পরে সব বলব। লোকটার নাম সংখ নীল কারাগার
n-তোমার ফোন বন্ধ, তাহলে কার ফোন নাম্বার এটা? দোকানের?
n-বলছি তো পরে বলব।
n– আচ্ছা, একটু ধর। লেখো ………
n
nরাত ৮তা ২৩ মিনিট।
n
n-হ্যালো,আপনি কোথায়?
n-আমি এইমাত্র পৌছলাম মুক্তমঞ্চে
n-আমিতো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, দেখতে পাচ্ছেন আমাকে? রাস্তার ডানে…
n-না, আসলে আমি মুক্তমঞ্চের এই চায়ের দোকানের গেট দিয়ে ঢুকেছি
n-আহা, ওই পাশে তো অনেক ভীড়, আপনাকে তো খুজেই পাবো না, আপনি বরং এ পাশের গেটে চলে আসুন, ব্রিজের দিকে।
n-আচ্ছা…
n
nকিছুক্ষন পরে কোকড়া চুলের শ্যামলা একটি ছেলেকে দেখা গেল। মেয়েটি বড় একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।
n
n-অবশেষে আপনাকে দেখা গেল!
n-আমি খুব দুঃখিত, আসলে তেমন কিছু চিনি না…
n-ইটস ওকে…
n
nমেয়েটি সিম খুলে দিতে দিতে বলল “আজ এই ভাইয়া না থাকলে আপনার সাথে হয়তো দেখাই হত না। আপনাকে থ্যাঙ্কস দিতে চাই না, বড় উপকার করলেন। চলুন সবাই মিলে চা খাই।
n-ইটস ওকে, বিপদে তো মানুষ মানুষকে হেল্প করবেই, আপনারা যান।
n– আচ্ছা, আপনার মত ভাল মানুষ এর সাথে পরে আর কোন দিন কথা হবে না, এটা হয় না, আপনি ফেসবুকে আছেন না?
n-হ্যা।আমার নাম কৃষিবিদ…
n-আচ্ছা, আমি আপনাকে অ্যাকসেস করে নেব। আসি, ভাল থাকবেন।
n
nতারপর সংখনীল ও মেয়েটি মুক্তমঞ্চে বসল। অনেক কথার পরে এক পর্যায়ে মেয়েটি বলল, আমাদের অফিস একজন খুব ভাল বাংলা কন্টেন্ট রাইটার খুজছে। আপনি কী বাংলা এবং ইংরেজী ভাল লিখতে পারেন, অভ্যাস আছে?
n-না , লেখালেখির অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছি। তবে আপনি বললে এমনি লিখবো, আপনাদের অফিসে নয়।
n
nএবার মেয়েটি চমকে তাকাল। সংখনীল বলে যেতে লাগল…
n-আসলে আমি ঠিক প্রথাগত চাকরি খুজছি না, অ্যাডভেঞ্চারাস চাকরি খুজছি, যেমন কিছুদিন আগে “র” এর অফিস থেকে আমাকে ফোন দিয়েছিল। “র” কী জানেন? জানেননাতো ? “র” হল পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা সংস্থা। ৫০০০০০ ডলার বেতন। শর্ত একটাই ওদের, কাউকে জানানো যাবে না, আর যেকোন সময় পৃথিবীর যেকোন জায়গায় যাবার জন্য তৈরি থাকতে হবে।তাই আমি এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি।ভাবছি, আপনার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব, কারন এই যখন-তখনের চাকরীতে খুব রিস্ক, তাই না? নিজের কথা না ভাবলেও বউ- বাচ্চার কথা তো ভাবতেই হবে।
n
nমেয়েটি উঠে দাড়াল। তার চোখে আগুন জ্বলছে। আরে! লোকটির মাথায় ক্যাড়া নাকি?কী ভেবেছে সে তাকে? আসতে রাজি করানোর জন্যই তাহলে এই চাকরীর কথা বলা?! আর দেখা করে সে এখন “র” এর আজগুবি গল্প শোনাচ্ছে।ব্যাটা তোর “র” এর মাথায় বাড়ি, সে রাগে কিছু না বলেই হন হন করে হাটা শুরু করল, সংখনীল দ্রুত মেয়েটির সংগ ধরল
n
n– আরে আরে…আপনি কোথায় যাচ্ছেন আমাকে একা রেখে?কী হল ভাই??
n-এভাবে মানুষের সহমর্মিতার সুযোগ নিয়ে কাউকে ধোকা দেয়া ঠিক না।
n– ওহ ! বুঝেছি। আমি খুব ই দুঃখিত। আসলে আমি যদি সত্যি কথা বলতাম, আপনি কী আমার সাথে দেখা করতেন বলুন?
n-কিন্তু আপনি যে উদ্দেশ্যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন তা কখনই সফল হবে না।
n-আরে ভাই, সফল হবার কোন দরকার নেই। আমি এসেছি ঢাকায় বেড়াতে, ভাবলাম আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি, ভাল লাগে, তাই আপনার সাথে একটু দেখা করি, একসাথে আড্ডা দেই কিছুক্ষন, দ্যাটস অল।
n
nসংখনীল হাসতে হাসতে বলেই যাচ্ছে
n– এখানে কোথায় ভাল চা বা কফি পাওয়া যায়, বলুন তো, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
n
n৪
n
nরাত ১২ টা ১০ মিনিট। ফেসবুকের চ্যাটবক্সটা টং শব্দ করে মাথা জাগাল।
n
n-হ্যা, কি হয়েছিল, বলতো? ছেলেটি কে?
n-ফেসবুক ফ্রেন্ড
n-বুঝলাম, তো?
n-আরে বলনা, দেখলেইতো মেসেজে, চাকরীর জন্য সে ইনিয়ে বিনিয়ে কত কথা বলল…(যা হয়েছে তার সবিস্তারিত বিবরণ)
n-হা হা হা…(অট্টহাসি) বলেছিলাম তোমাকে, অপরিচিত কাউকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ো না।
n– মর জ্বালা! আমি কী পাঠিয়েছি নাকি কাউকে? সাধারনত অ্যাকসেপ্ট করি।
n-বাপরে! মনে হচ্ছে তুমি বিশাল সেলিব্রিটি হয়ে গেছো!
n-মজা করনা, ওরকম দু-পাচটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট সবার প্রতিদিন আসে
n– আর অমনি অচেনা অজানা লোকজনের রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করতে হবে!
n-দ্যাখো, আমি অ্যাকসেপ্ট করেই শুধু খান্ত না, সাথে সাথে তার ইনফো, ওয়াল হিস্ট্রি, ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করি। যদি খারাপ হয় কোন না কোনভাবে বোঝা যায়। এই ছেলেটার চিন্তা ধারা প্রগতিশীল, যথেষ্ঠ মিশুক সে। তাছাড়া আজকাল নেটোয়ার্কিং বাড়ানো ও একটা ফ্যাক্ট। তুমিতো জান, ক্যারিয়ারের জন্য ও ফেসবুক প্রোফাইল আজকাল ইম্পর্টান্ট।
n-সবই বুঝলাম। কিন্তু এর চেয়ে বাজে ঘটনাওতো ঘটতে পারতো!
n-না, কারন আমি সচেতন ছিলাম, তাই তাকে মুক্তমঞ্চের মত জায়গায় আসতে বলেছিলাম।
n-আর ও সচেতন থাকা ভাল, সাবধানের মার নেই
n-আচ্ছা বাবা, নেই
n-বাবা ডাকছ কেন?
n-কষ্টে, তোমরা ছেলেরা যে কত রংগই জানোরে বাবা…এ্যতদিন করেছো ফোনে…এখন ফেসবুকে
n-উহু ঊল্টো। মেয়েরা এ ক্ষেত্রে অ্যাকটেল, মানে এক ধাপ এগিয়ে। এ্যতদিন চাহিবার তালিকায় ছিল শুধুই বাড়ি/ তারপর আসিল গাড়ি/ মুঠোফোনের কান মলায়/দড়ি পড়েছি গলায়/ এখন আবার ফেসবুক /বেছে নেবো কোন মুখ…মেয়েরা এখন কনফিউসড…:-)
n-:X
n-;-P
n
nফেসবুক এভাবেই জীবনে বাক আনে কখনো, কখনো আনে ভাল লাগা, মন্দ লাগা। ফেসবুক ও এখন মানুষের জীবনের একটি অনুষংগ, যেমন হয়েছে আমার। বাস্তব জীবনে উপরের এই মেয়েটি তাই আমি ই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোন অনুষংগই খারাপ বা অপকারী নয়, এর ব্যাবহারের উপর নির্ভর করে এর উপকারীতা বা অপকারীতা। তাই ফেসবুক এর ক্ষেত্রেও এর ব্যবহারের উপর এর ভাল মন্দ প্রভাব নির্ভর করছে। দয়া করে এখানে কেউ কাউকে খুব ভাল করে না জেনে প্রতারিত হবেন না। আপনাদের ফেসবুক জীবন শুভময় হোক।
